পুষ্পদাম
ঢাকা থেকে ৫৫ কিলোমিটার দূরে গাজীপুর জেলার ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে বাঘের বাজারে পুষ্পদাম শুটিং স্পটটি অবস্থিত। অফিসিয়াল, পারিবারিক পিকনিক বা মিলনমেলা কিংবা শুটিং এর জন্য এটি একটি চমৎকার জায়গা। এখানে বিশাল পরিসরে রয়েছে দেশি-বিদেশি বাহারি গাছের সমাহার। প্রবেশ পথেই রয়েছে বিশাল দেবদারু গাছের সারি। একপাশে একটি জাপানি ধাঁচের বাড়ি। এ পথ পেরিয়ে একটু ভিতরে ঢুকলেই রয়েছে ফুলে ফুলে ঘেরা কয়েকটি কটেজ। এখানে রয়েছে বিশাল খেলার মাঠ, কৃত্রিম লেক, ঝর্ণা ও সুইমিংপুল। পর্যাপ্ত রান্নাঘর, টয়লেট ছাড়াও এখানে আছে একই সাথে এক হাজার লোকের খাবার জায়গা। এটিকে ঘোরার জায়গা হিসাবে বিবেচনা না করে পিকনিক স্পট হিসাবে বিবেচনা করা উচিৎ। মাঠগুলি বেশ বড় এবং ফুলের বাগানগুলি চমৎকার। এখানে আপনি যেকোন ধরনের খাবার অর্ডার দিতে পারবেন। দেশি, চাইনিজ, ইন্ডিয়ান, থাই, ফাষ্টফুড সহ সব ধরনের খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। জয়দেবপুর সদর রাণীবিলাস্মনি স্কুলের পাশে অবস্থিত ভয়াল রাজার এই প্রাসাদটি অবস্থিত। এখানে বিরাট নাগলিঙ্গম ফুলের গাছ দরজার ঠিক পরেই। সারা বছরই ফুলে ফুলে ছেয়ে থাকে গাছটা। দরজার ওপর জেলা পরিষদের সাইনবোর্ড। ১৯৭৮ সালে বাড়িটিকে জেলা পরিষদ ভবন হিসাবে ঘোষণা করা হয়। প্রবেশ্মুখ পার হলেই প্রশস্ত একটি বারান্দা, এরপর হলঘর। ওপরে ওঠার জন্য আগে শাল কাথের প্রশস্ত সিঁড়ি ছিল। নাটমন্দির রয়েছে বাড়ির ঠিক মধ্যিখানে। এটি লম্বালম্বি একটি বড় টিনের ঘর। মঞ্চটি মাঝখানে। বাইজিরাও দাওয়াত পেত নাচার জন্য। রাজবাড়ির অন্যান্য অনুষ্ঠানও হতো এই ঘরে। জমিদার শিকারে গেলে যদি কাউকে মনে ধরত হাতি পাথিয়ে দিতেন তাকে উঠিয়ে আনার জন্য। পশ্চিম দোতলা ভবনে তার জন্য ঘর বরাদ্দ করতেন। মনোরঞ্জনের জন্য রাজবিলাস নামের আরেকটি কামরা ছিল। রাজার বিশ্রামাগার হাওয়ামহলও ছিল এই ভবনের নিচতলায়। দক্ষিণ দিকের খিলানযুক্ত উন্মুক্ত কক্ষটি হচ্ছে ‘পদ্মনাভি’। মাঝের বড় ঘরটির নাম ‘রাণীমহল’। ছোটবড় মিলিয়ে ৩৬০টি কক্ষ আছে এই ভবনে। রাজবাড়ি ঘুরে চলে আসতে পারেন রাজ পরিবারের শ্মশানে যার নাম শ্মশানেশ্বরী। এটি এক কিলোমিটার উত্তরে চিলাই নদীর তীরে। পুরনো একটি শিব মন্দির আছে। একটি শিখর কাঠামোর সমাধি মন্দিরও আছে, ফুল-লতা-পাতায় অলংকৃত। কম বয়সী আরো তিনটি সমাধী আছে মন্দির রয়েছে এখানে। রাজবাড়ি আর শ্মশানগাহটের মাঝখানে আছে শালবন। শালবন থেকে খানিক এগোলে ‘রাজা অধর চন্দ্র স্কুল ও কলেজ’ দেখা যায়। প্রায় ১৫ একর জায়গার ওপর নির্মিত ভাওয়াল রাজবাড়ি। জমিদার লোকনারায়ণ রায় নির্মাণ কাজ শুরু করে ছিলেন, শেষ করেন রাজা কালিনারায়ণ রায়। ভাওয়াল রাজারা বেশি আলোচনায় আসে পরিবারের মেঝো সন্তান রমেন্দ্রনারায়ণ রায়ের কারণে। তিনিই মরে গিয়ে আবার ফিরে আসার ঘটনার জন্ম দিয়েছিলেন। দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত চিকিৎসার জন্য দার্জিলিং গিয়েছিলেন। চাউর হয়েছিল তিনি মারা গেছেন। আসলে রানি বিভাবতী ও ডাক্তার আশুতোষ দাশগুপ্ত ষড়যন্ত্র করে তাকে বিষ প্রয়োগ করেন। ভাড়াটিয়া ডোম দিয়ে চিতায় পোড়ানোর ব্যবস্থাও করেন। কিন্তু প্রবল বৃষ্টিতে ডোম্রা না পুড়িয়েই চলে আসেন। রমেন্দ্র নারায়ণ জেগে ওঠেন। ৯ বছর পর স্মৃতিশক্তি ফিরে পেয়ে ভাওয়ালে এসে উপস্থিত হন। তিনি জমিদারি দাবি করে মামলা ঠুকে দেন। ব্রিটিশ আমলে ঘটনাটি কলকাতায় খুব ঝড় তোলে। ঢাকা হতে যেতে হবে গাজীপুর চৌরাস্তা। সেখান হতে ডান দিকে রাস্তাটি গিয়েছে জয়দেবপুর সদর বরাবর।জয়দেবপুর সদর রেল ক্রসিং পার হয়ে সামান্য সামনে এগিয়ে গেলেই রাণী বিলাস্মনি স্কুল। এই স্কুলের ঠিক বিপরীত পাশেই ভাওয়াল রাজবাড়িটি অবস্থিত। আর রাজবাড়ি হতে ১ কি.মি. উত্তরে এগিয়ে গেলেই স্মশান। রাজবাড়ি হতে শ্মশানে রিকসা করে যাতে লাগে মাত্র ১০ মিনিট। ঢাকা থেকে সরাসরি এটি সর্শন করে আবার দিনের দিনই ফিরে যাওয়া যায়। তবে কেউ এখানে থাকতে চাইলে আবাসিক হোতেলে থাকতে পারেন। এখানে থাকার মান খুব একটা উন্নত নয়।