মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মুক্তিযুদ্ধ-ভিত্তিক দেশের প্রথম জাদুঘর। এটি ঢাকার ৫নং সেগুনবাগিচায় অবস্থিত। বেসরকারি উদ্যোগ প্রতিষ্ঠিত এই জাদুঘরের উদ্বোধন হয় ১৯৯৬ সালের ২২শে মার্চ। মুক্তিযুদ্ধের অনেক দুর্লভ বস্তু আছে এই জাদুঘরে। ১৯৯৬ সালের ২২ মার্চ সেগুনবাগিচার একটি সাবেক ভবন ভাড়া নিয়ে যথাযথ সংস্কার শেষে দ্বার উদঘাটন হয় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের। আটজন ট্রাস্টির উদ্যোগে ইতিহাসের স্মারক সংগ্রহ, সংরক্ষন ও উপস্থাপনের এই প্রয়াস গোড়া থেকেই ব্যাপক মানুষের সমর্থন ও সহায়তায় ধন্য হয়েছে। বর্তমানে জাদুঘরের সীমিত পরিসরে প্রায় ১৪০০ স্মারক প্রদর্শিত হলেও সংগ্রহভান্ডারে জমা হয়েছে ১৫,০০-এরও বেশি স্মারক। ১৯৯৯ সালে বাগ্নলাদেশ সেনাবাহিনির সহায়তায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিরপুরে মুসলিম বাজার ও বধ্যভূমি খননের কাজ সম্পন্ন করে ও পরে (২০০৮ সালে) বধ্যভূমিতে একটি স্মৃতিপীঠ নির্মাণ করে। ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’এর অংশীদারিত্বে নতুন প্রজন্মের কাছে ইতিহাস ও মানবাধিকার বিষয়ক প্রদর্শ্নীর বিশেষ আয়োজন করে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের রয়েছে গ্রন্থগার ও তথ্য ভান্ডার এবং অডিও-ভিজ্যুয়াল সেন্টার। হৃদয় আলোড়িত করা জাদুঘর-প্রদর্শনী ও বিভিন্নমুখি কর্মতৎপরতা দ্বারা মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর পরিণত হয়েছে দেশে-বিদেশে নন্দিত প্রতিষ্ঠানে। একটি বৃহৎ আকারের বাসের অভ্যন্তরে প্রদর্শনী সাজিয়ে একে পরিণত করা হয়েছে খুদে জাদেঘরে। বাংলাদেশ জুড়ে পরিভ্রমণ দ্বারা বাস্টি জেলা উপজেলার পরত্যন্ত অঞ্চলে প্রদর্শণির আয়োজন করে থাকে। ২০০১ থেকে ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর বাসটি বিভিন্ন জেলায় যেতে শুরু করেছে। ২০০৩ সাল থেকে বিশেষভাবে শিক্ষাপতিষ্ঠানে প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। এ পর্যন্ত ৩২টি জেলায় ২০৬টি উপজেলায় ৬৩৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৩,৫৫,১৬৩ জন ছাত্রছাত্রী প্রদর্শ্নীতে অংশ নিয়েছে। (ডিসেম্বর ২০১০) ‘স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রেক্ষাপটে মানবাধিকার, শান্তি ও সম্প্রীতির শিক্ষা’ কর্মসূচির আওতায় ভ্রাম্যমাণ জাদুঘরটি শিক্ষার্থীর কাছে বিশেষ উপস্থাপনা করে থাকে। সেই সাথে শিক্ষার্থীদের তাদের পরিবার-পরিজন ও প্রতিবেশীদের মধ্যে থেকে যারা একাত্তরের দিনগুলো প্রত্যক্ষ করেছেন তাদের কোন একজনের অভিজ্ঞতা বিবরণী শুনে তা নিজ ভাষায় লিখে জাদুঘরে প্রেরণ করতে উদ্বুদ্ধ করা হয়। এ পর্যন্ত প্রায় ১৬,০০০-এরও বেশি প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্য সংগৃহীত হয়েছে ও তা আরকাইভে সংরক্ষিত হচ্ছে। অসহযোগ আন্দোলন ও ৭ মার্চের ভাষণ, গণহত্যা, বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা, প্রথম প্রতিরোধ, ঊদ্বাস্তু সমস্যা, মুজিবনগর সরকারের প্রতিষ্ঠা, সেক্টর বিভাজন ও সংগঠিত সামরিক প্রতিরোধ, জনযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের সরকারের কর্মকান্ড, সেক্টর ও ব্রিগেড কমান্ডারদের অধীনে সশস্ত্র যুদ্ধ, নৌকমান্ডো, বিমান বাহিনীতে বিমানযোদ্ধা, স্বাধীন বাংলা বেতার, গণমাধ্যম, সামরিক প্রশিক্ষণ ও শিবির, মুক্ত এলাকা, আন্তর্জাতিক সংহতি, দেষিয় দালালদের ভূমিকা, রাজাকার বাহিনী, শান্তিকমিটি ও আলবদর বাহিনী, বঙ্গবন্ধুর বিচার, দেশের অভ্যন্তরে প্রতিরোদ, নারীদের ভূমিকা, নারী নির্যাতন, যৌথ বাহিনী গঠন ও ডিসেম্বরের চূড়ান্ত লড়াই, মিত্রবাহিনীর ভারতীয় সদস্যদের আত্মদান, বুদ্ধিজীবী হত্যা এবং বিজয়। জাদুঘরে প্রদর্শনীতে ইতিহাসের মূল্ধারার পাশাপাশি ব্যক্তিমানুষের জীবন ও আত্মদানের পরিচয় মেলে ধরা হবে বিশেষ গুরুত্বসহকারে। জাদুঘরের প্রদর্শনী শেষে আত্মোপলব্ধি বা ভাবমগ্নতার পরিসর সংযোজিত হবে। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া, বিশেষভাবে নবীন শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন আধুনিক উপায় বা সুযোগ সমন্বিত রাখা হবে এবং সেই সাথে অডিও-ভিজ্যুয়াল তথা চলচ্চিত্র প্রদর্শনের ব্যবস্থা বিভিন্নভাবে গ্যালারির ভিতরে সংযোজিত থাকবে।