BD Yellow Pages

মধুপুর


বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণের অনেক স্থান থাকলেও টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর গড়ের শালবন একটি ঐতিহাসিক স্থান। বিশেষ করে মে মাসে শালের জীর্ণ পাতারা ঝরে পড়ে নতুন পত্রপুষ্পে সুশোভিত হয়। চারিদিকে শুধু সবুজের সমারোহ ও বনের অভ্যন্তরে গজিয়ে ওঠা বিভিন্ন প্রজাতির চারা ও লতা-গুল্ম মন ভরিয়ে দেয়। তখন বনের মধ্যে এখানে সেখানে থাকে বেগুনি রঙের জারুল বৃক্ষের মনকাড়া ফুলের বাহার তবে জুন মাস এলেই সেই দৃশ্যপট পাল্টিয়ে শালবন্টি ঘন জঙ্গলে রূপ নেয়। মধুপুর জাতীয় উদ্যানের প্রধান গেট থেকে দোখলা রেস্টহাউজ পর্যন্ত দূরত্ব প্রায় ১০ কি.মি.। সড়কপথে জংলের ভিতরে প্রবেশের প্রধান যানবাহন গাড়ি। আশেপাশে বনের অন্যান্য স্থানে ঘুরলে আরো খানিকটা পথ পাড়ি দিতে হয়। মধুপুর জাতীয় উদ্যানের আশেপাশের এলাকাগুলোআদিবাসি অধ্যুসিত গ্রাম। জাতীয় উদ্যান সংলগ্ন ময়মনসিংহ বন বিভাগের রসুলপুর রেঞ্জ কার্যালয় অবস্থিত। উহার পাশেই আছে জলই রেস্টহাউজ ও মহুয়া কটেজ। মধুপুর বনের অভ্যন্তরের দৃশ্য অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর। সবুজ অরন্যের প্রাকৃতিক দৃশ্য ও পরিবেশ নৈসর্গিক। ইট বিছানো রাস্তায় চলতে চলতে রাস্তার দুধারের সবজ বন-বনানীর দৃশ্য দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। মন হারিয়ে যায় কোলাহলমুক্ত একটি নীরব-নিথর বনবিথির মাঝে। মধুপুর জাতীয় উদ্যানের আয়তন ২০,৮৪০ একর। প্রধান ফতক দিয়ে বনের মধ্যে ঢুকলে চোখেপড়ে শুধু শালবন আর সবুজের সমারোহ। বনের অভ্যন্তরে আছে নানান জাতের নানান বাহারের গাছ-গাছড়া, যেমন-শাল, বহেড়া, আমলকি, হলুদ, আমড়া, জিগা, ভাদি, অশ্বথ, বট, সর্পগন্ধা, শতমূলী, জয়না, বিধা, আজুকি/হারগাজা, বেহুলা ইত্যাদি। আছে বিভিন্ন প্রজাতির পাহাড়ি আলু, শটি; আছে নাম না জানা বিচিত্র ধরনের লতা-গুল্ম। দর্শনীয় প্রাণীদের মধ্যে আছে অসংখ্যবানর, হনুমান, আছে নানান জাতের পাখ-পখালি, হরিণ, বন বিড়াল, বন মোরগ, বাগডাসা ইত্যাদি। বনের ঠিক মাঝখানে আছে হরিণ প্রজনন কেন্দ্র। লহরিয়া বিট এ অফিস সংলগ্ন এ কেন্দ্রে দেখতে পাওয়া যায় চোখজুড়ানো চিত্রা হরিণের বিচরণ। সেখানেও হনুমানের সমারোহ সকলকে মুগ্ধ করবেই। পাশেই সু-উচ্চ টাওয়ারে উঠলে মধুপুর পার্কের অভ্যন্তরে সবুজ বৃক্ষরাজি দেখে কিছুক্ষণের জন্য হলেও মুগ্ধ হতে হয়। সেখান থেকে দোখলা রেস্টহাউজের দিকে রওনা হলে রাস্তার দু’পাশে দেখা যায় সবুজ শালবন আর নানান প্রজাতির বৃক্ষরাজি। সেখানে নেই কোন জনারণ্য। আছে শুধু শুনশান নিরবতা আর পাখ-পাখালির কলরব। দোখলা নামক স্থানে দোখলা রেস্টহাউজ, চুনিয়া কটেজ, বকুল কটেজ, দুটি পিকনিক স্পট, জুঁই ও চামেলী বাগান। একটি ইউথ হোস্টেল ও একটি সু-উচ্চ টাওয়ার, আছে খেলার মাঠ, পানীয় জলের ব্যবস্থা, টয়লেট, বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। এর পাশেই রয়েছে একটি ছোট্ট বাজার, আশেপাশে আছে আদিবাসিদের পল্লী। মধুপুর বনাঞ্চলের অরনখোলা মৌজার বনভূমিতে অবস্থিত বন বিশ্রামাগারটিই দোখলারেস্টহাউজ। টাঙ্গাইল জেলা সদর হতে প্রায় ৬০ কি.মি. দূরে এবং মধুপুর উদ্যানের প্রধান ফটক হতে ১০ কি.মি. ভিতরে এর অবস্থান। এ অঞ্চলের বনভূমির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা, বন্য প্রানী ও জীব-বৈচিত্র অবলোকন করার সুবিধা এ রেস্টহাউজের মাধ্যমে পাওয়া যায়। অধিকন্তু বৈজ্ঞানিক গবেষণা, উদ্ভিদ ও প্রাণী সম্পর্কিত শিক্ষা কার্যক্রমে বিশ্রামাগারটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আদিবাসিদের জীবনধারা বিচিত্র। দোখলা পঁচিশ রাস্তার শেষে জলছত্র এলাকায় আদিবাসীদের নিজস্ব তাঁতে বুনান বিভিন্ন রেশম বস্ত্র শিল্পের বিক্রয় কেন্দ্র “কারিতাস”। টাঙ্গাইল জেলা শহর থেকে ময়মনসিংহ যাবার পথে রসুলপুর মাজার নামক স্থানে গিয়ে বামপাশে মধুপুর জাতীয় উদ্যানের প্রধান ফটক। ফটকের পাশেই মধুপুর জাতীয় উদ্যান রেঞ্জ অফিস ও সহকারি বন সংরক্ষকের অফিস অবস্থিত। সেখানে গাড়ি থামিয়ে গেটে অনুমতি নিয়ে বনের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে হয়। তাছাড়া আরও একটি সামনে ২৫ মাইল নামক স্থানে গিয়ে ডানদিকে প্রায় ৯ কি.মি. পথ পাড়ি দিয়ে দোখলা রেঞ্জ অফিস এবং দোখলা রেস্ট হাউজ-এর অবস্থান। সেখানেও অনুমতি নিয়ে বনের অভ্যন্তরে ঢুকতে হয়। উদ্যানের ভিতরে দোখলা নামক স্থানে দোখলা রেস্টহাউজ, চুনিয়া কটেজ, বকুল কটেজ নামে কয়েকটি কটেজ রয়েছে। রাত্রিযাপনের জন্য একটি আদর্শ স্থান।